শুক্রবার, ২২ অগাস্ট ২০২৫, ০৬:৩০ পূর্বাহ্ন

বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা জবাবদিহি ও অনুদানের অর্থ ব্যয়ে অনিয়মের অভিযোগ

কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি : কুড়িগ্রামের চিলমারীতে সেকেন্ডারি এডুকেশন ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রাম(এসইডিপি) এর বরাদ্দকৃত অর্থ ব্যয়ে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে।সাধারন শিক্ষক,সুবিধাবঞ্চিত এবং বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিক্ষার্থীদের বরাদ্দসহ বিভিন্ন খাতে বরাদ্দের অর্থ ব্যয়ে অনিয়ম করা হলেও প্রতিষ্ঠান প্রধানদের দাবী সঠিকভাবে সব খাতে ব্যয় করা হয়েছে।

জানা গেছে,শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ উন্নয়ন-১ শাখার সেকেন্ডারি এডুকেশন ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রাম (এসইডিপি) এর আওতাভূক্ত পারফরমেন্স বেজড গ্রান্টস ফর সেকেন্ডারি ইন্সটিটিউশনস স্কিম এর আওতায় স্কুল/কলেজ/ মাদ্রাসা ব্যবস্থাপনা জবাবদিহি অনুদান হিসাবে উপজেলার ৩টি মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও ৩টি মাদ্রাসায় ৫লক্ষ টাকা করে মোট ৩০লক্ষ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়। অর্থ বরাদ্দ প্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান সমুহ হলো-রাধাবল্লব উচ্চ বিদ্যালয়, ফকিরেরহাট উচ্চ বিদ্যালয়, মুদাফৎথানা এসসি উচ্চ বিদ্যালয়, পাত্রখাতা রিয়াজুল জান্নাহ দাখিল মাদ্রাসা, রাজারভিটা ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসা ও চিলমারী সিনিয়র মাদ্রাসা।

প্রকল্পের বরাদ্দ অপারেশন ম্যানুয়াল অনুযায়ী প্রতিটি প্রতিষ্ঠানে ৫লক্ষ টাকা অনুদানের অর্থ শিক্ষকবৃন্দের জন্য প্রণোদনা ২০% টাকা, বইপত্র-লাইব্রেরি শিক্ষা উপকরণ এবং গবেষণাগার সরঞ্জাম ইত্যাদি ক্রয় বাবদ ৩০% টাকা, ছাত্র-ছাত্রী বিশেষ করে ছাত্রীদের জন্য স্কুল/কলেজ/ মাদ্রাসা/ ফ্যাসিলিটির (অবকাঠামো,বিশুদ্ধ পানি, শৌচাগার, কমনরুম ইত্যাদি) উন্নয়ন বাবদ ২৫% টাকা, সুবিধাবঞ্চিত শিক্ষার্থীদের সহায়তা ব্যয় বাবদ ১৫% টাকা ও প্রতিবন্ধী/বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিক্ষার্থীদের ফ্যাসিলিটি উন্নয়ন বাবদ ১০% টাকা ব্যয় করতে হবে। অভিযোগ রয়েছে, প্রতিষ্ঠানসমুহ তাদের প্রাপ্ত অর্থ থেকে শিক্ষকবৃন্দের জন্য প্রণোদনা ২০% টাকা প্রদান ছাড়া অধিকাংশ কাজে অনিয়মের আশ্রয় নেয়া হয়েছে। কোন কোন প্রতিষ্ঠানের প্রণোদনাতেও অনিয়মের আশ্রয় নেয়া হয়েছে।

সরেজমিনে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ঘুরে দেখা গেছে, বইপত্র-লাইব্রেরি শিক্ষা উপকরণ এবং গবেষণাগার সরঞ্জাম ইত্যাদি ক্রয়ের ক্ষেত্রে ভাউচারকে বেশী প্রাধান্য দেয়া হয়েছে। ছাত্র-ছাত্রী বিশেষ করে ছাত্রীদের জন্য স্কুল/কলেজ/ মাদ্রাসা/ ফ্যাসিলিটির (অবকাঠামো,বিশুদ্ধ পানি,শৌচাগার,কমনরুম ইত্যাদি)উন্নয়নের স্থলে সামান্য কাজ করে ছয় নয় হিসাব দেখানো হয়েছে। শিক্ষকদের জন্য প্রণোদনার কিছু টাকা দিয়ে বন্ঠনকৃত অর্থের কাগজে স্বাক্ষর নেয়া হয়েছে। সুবিধাবঞ্চিত শিক্ষার্থীদের সহায়তা ব্যয় ও প্রতিবন্ধী/বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিক্ষার্থীদের ফ্যাসিলিটি উন্নয়নের সামান্য টাকা দিয়ে কাগজে-কলমে বরাদ্দকৃত অর্থের অঙ্কে স্বাক্ষর নেয়ারও অভিযোগ রয়েছে। তালিকায় নাম দেয়া কোন কোন শিক্ষার্থী এক টাকাও পায়নি। রাধাবল্লভ উচ্চ বিদ্যালয়ে হাতল চেয়ার,হাতল ছাড়া চেয়ার,র‌্যাক,হেলনা বেঞ্চ ও বড় টেবিলসহ বিভিন্ন আসবাবপত্র ক্রয়ের ভাউচার দেয়া হলেও বাস্তবে ওইসব পণ্য ক্রয় করা হয়নি।সেখানে শিক্ষা প্রকৌশল বিভাগ কর্তৃক নবনির্মিত ভবনের সাথে দেয়া সামগ্রীকে দেখানো হয়েছে। স্কুলটির প্রধান শিক্ষক মঞ্জুরুল ইসলাম এই অর্থ দিয়ে মাঠে মাটি ভরাটের কথা জানালেও সে মাটি ভরাট ছিল অন্য প্রকল্পের অর্থে। পাত্রখাতা রিয়াজুল জান্নাহ দাখিল মাদ্রাসায় দেখা যায় সিড়ির পাশ্বে সরকারীভাবে দেয়া পূর্বের কিছু বই ঢেকে রাখা হয়েছে। প্রতিবন্ধিদের অর্থের বিষয়ে মাদ্রাসাটির সুপারিনটেনডেন্ট জানান আইরিন নামের এক প্রতিবন্ধিকে ৫০হাজার টাকা দেয়া হয়েছে। এ প্রতিনিধি ওই প্রতিবন্ধির মুখোমুখি হলে সে ১৫ হাজার টাকা পেয়েছে বলে জানায়। বিষয়টি জানাজানি হলে ওই প্রতিবন্ধিকে ২৫হাজার টাকাসহ অপর দুই প্রতিবন্ধির নামে ২৫হাজার টাকা প্রদান দেখিয়ে ভাউচার প্রদান করা হয়।পরে প্রতিবন্ধি আইরিনকে আরো ৩হাজার টাকা দিয়ে আগামী মাসে ২হাজার টাকা দিবেন এবং ৫হাজার টাকা অফিস কেটে নিয়েছে বলে আইরিনকে জানিয়েছেন সুপারইনটেনডেন্ট আঃ আজিজ আকন্দ। ফকিরেরহাট উচ্চ বিদ্যালয়ের সুবিধাবঞ্চিত শিক্ষার্থী ও প্রতিবন্ধী/বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিক্ষার্থীর তালিকায় শারীরিক প্রতিবন্ধি মরিয়ম বেগম,বাক প্রতিবন্ধি নুর আসমা,কামরুজ্জামান উল্লাস ও রুহুল বাবুদের নাম থাকলেও তাদের সাথে কথা বলে জানাগেছে তারা স্কুল থেকে কোন টাকা-পয়সা পায়নি। চিলমারী সিনিয়র আলিম মাদ্রাসার ৮ম শ্রেণীতে পড়ুয়া প্রতিবন্ধি শিক্ষার্থী মামুনুর রশিদের নামে ৫হাজার টাকা প্রদান দেখানো হলেও মামুনের মা জানান, তার ছেলেকে মাদ্রাসা থেকে সাড়ে ৩হাজার টাকা দেয়া হয়েছে। সাধারন শিক্ষক,সুবিধাবঞ্চিত এবং বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিক্ষার্থীদের বরাদ্দসহ বিভিন্ন খাতের বরাদ্দে অনিয়ম করা হলেও প্রতিষ্ঠান প্রধানদের দাবী সঠিকভাবে সব খাতে অর্থ ব্যায় করা হয়েছে।

এ বিষয়ে রাজারভিটা ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ ড.মো.মিনহাজুল ইসলাম জানান,মাদ্রাসা ব্যবস্থাপনা জবাবদিহি অনুদানের ৫ লক্ষ টাকা যথাযথভাবে ব্যয় করা হয়েছে।

এ বিষয়ে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মো.তাহের আলী জানান, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ব্যবস্থাপনা জবাবদিহি অনুদান হিসাবে উপজেলার মোট ৬টি প্রতিষ্ঠান ৫লক্ষা টাকা করে পেয়েছে। তারা খাতওয়ারী ব্যয় করে যথাযথ ভাউচার জমা দিয়েছেন। আমরা তা সংশ্লিষ্ট দপ্তরে পাঠিয়েছি।

সংবাদটি শেয়ার করুন

© All rights reserved © 2024  Ekusharkantho.com
Technical Helped by Curlhost.com